Blogs

মুখ বেকে যাওয়া বা বেলস পালসি​

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কী?

এটা এক ধরনের প্যারালাইসিস, আমাদের ৭তম ক্রেনিয়াল নার্ভটিকে ফেসিয়াল নার্ভ বলে। যখন এটি আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায় তখন তাকে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা পালসি বলা হয়। জন বেল নামের এক ভদ্রলোক এই রোগটি প্রথম আবিষ্কার করেন সেজন্য একে বেলস পালসিও বলা হয়।

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কাদের বেশি হয়?

এটি যে কোনো বয়সের মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে, তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এই রোগটি বেশি দেখা যায়।
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কেন হয়?

বেলস পালসি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১। ভাইরাল ইনফেকশন
২। মধ্য কর্ণে ইনফেকশন
৩। ঠাণ্ডাজনিত কারণ
৪। আঘাতজনিত কারণ
৫। মস্তিষ্কের স্ট্রোকজনিত কারণ
৬। ফেসিয়াল টিউমার
৭। কানের অপারেশন পরবর্তী ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি ইত্যাদি।

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি হলে রোগীর কী কী লক্ষণ দেখা যায়?

১। আক্রান্ত রোগীর মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যায়
২। আক্রান্ত পাশের চোখ বন্ধ হয় না ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে
৩। কুলি করতে গেলে অন্য পাশে চলে যায়
৪। খাবার গিলতে কষ্ট হয়
৫। কপাল ভাঁজ করতে পারে না
৬। অনেক সময় কথা বলতে কষ্ট হয়।

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি নির্ণয় করবেন কীভাবে?

এটি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ও রোগীর ইতিহাস জেনে রোগ নির্ণয় করতে পারেন, তবে অনেক সময় কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন- ১। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট উইথ ইএসআর ২। এক্স-রে অব টিএম (টেম্পরো-মেন্ডিবুলার) জয়েন্ট ৩। নার্ভ কন্ডাকশন ভেলসিটি (এনসিভি) অব ফেসিয়াল নার্ভ ইত্যাদি।
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসির চিকিৎসা কী?

এই রোগের চিকিৎসা কারণের ওপর নির্ভর করে। ওষুধ কারণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন, তবে সবক্ষেত্রেই ওষুধের পাশাপাশি মূল চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। এই রোগে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান করে থাকে তার মধ্যে-

– প্রোপ্রাইওসেপ্টিভ নিউরো মাস্কুলার ফ্যাসিলিটেশন
– ইনফ্রা রেড রেডিয়েশন থেরাপি
– ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিম–লেশন থেরাপি
– অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ ফ্যাসিয়াল মাসল এক্সারসাইজ
– স্পিচ রি-এডুকেশন থেরাপি
– ব্যালুনিং এক্সারসাইজ
– রিঙ্কলিং এক্সারসাইজ ইত্যাদি।

তবে এই রোগের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২-৩ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।

রোগীর কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
যেমন-
১। ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে
২। আইসক্রিম ও ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া যাবে না
৩। বাইরে বা রোদ্রে গেলে চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে যেন আক্রান্ত চোখে ধুলাবালি ঢুকতে না পারে।
৪। রাতে ঘুমানোর সময় আক্রান্ত চোখের ওপর রুমাল বা নরম কাপড় দিয়ে রাখতে হবে যাতে কোনোকিছু চোখের মধ্যে না পড়ে।
৫। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *