Blogs

হাটু ব্যথা​

হাটুঁব্যথা কি?

মাস্কুলোস্কেলেটাল যে সকল সমস্যা রয়েছে হাঁটু ব্যথা তাদের মধ্যে অন্যতম।হাঁটু ব্যথা খুব প্রচলিত সমস্যা আমাদের দেশে। এক গবেষণায় দেখা যায় আমাদের দেশে জনসংখ্যার ৩৪.৬০% মানুষ এই হাঁটু ব্যথায় ভুগে থাকেন (Mohsin.M.F. et al.,2019)।
একটি বিশেষ বয়সে এই সমস্যাটা অনেক বেড়ে যায়। তবে যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে।যদি বয়স ভেদে আমরা বলি, ছোটদের সাধারণত রিকেটসের জন্য হয়। এতে হাঁটু ব্যথা হয় এবং হাঁটু বেঁকে যায়।

মধ্যবর্তী বয়সে যদি আমরা বলি, তাহলে হাঁটুর ব্যথা কোনো আঘাতের জন্য হয়। সেটা মেনিস্কাস ইনজুরি, লিগামেন্ট ইনজুরি বা কোনো ফ্রাকচার-এসব কারণে মধ্যবর্তী বয়সের লোকদের সমস্যা হয়। আর বৃদ্ধ বয়সে প্রধানত অস্টিওআরথ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস-এসব কারণে হাঁটুর ব্যথা হয়।
হাটু মুলত ফিমার,টিবিয়া এবং পেটেলা নামক ৩ টি হাড়ের সমন্বিত অংশ। এই হাড়গুলোকে পরস্পরের সাথে বেধে রাখতে সহায়তা করে কতগুলো লিগামেন্ট। এছাড়া এর চারিদিকে রয়েছে বার্সা (মুভমেন্টের সময় মাংশ পেশি এবং টেন্ডন এর ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে)। রয়েছে কার্টিলেজ(আর্টিকুলার কার্টিলেজ,মিনিস্কাস),টেন্ডন,মাসল(কোয়াড্রেসিপ্স মাসল যা হাটুকে স্টেবিলিটি প্রদান করে)।যখনি এ সকল অংশে আঘাত বা ইনজুরি, ক্ষয় অথবা কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটে তখনই হাটু ব্যথা হয়ে থাকে।

হাটুঁব্যথারকারনঃ
ইনজুরি, মেকানিকাল প্রবলেম, আর্থ্রাইটিসজনিত সমস্যা অথবা অন্য কোন প্যাথলজিক্যাল কারনে এই হাটুঁ ব্যথা হতে পারে।
#ইনজুরি – নানা কারনে হাটুর ইনজুরি হয় এর মধ্যে হাড়,লিগামেন্ট, টেনডন, বার্সা,কার্টিলেজ এর ইনজুরি অন্যতম তাদের মধ্যে –
১। ফ্রাকচার
২। ACL ইনজুরি
৩।বার্সাইটিস
৪।মিনিস্কাস ইনজুরি
৫।টেন্ডিনাইটিস (পেটেলার টেন্ডিনাইটিস) অন্যতম।

#মেকানিক্যাল -মেকানিকাল পেইন এর মধ্যে রয়েছে
১।লুজ বডি (জয়েন্টের মাঝেঅনাকাঙ্ক্ষিত অংশবিশেষ)
২। ইলিয়োটিবিয়াল বেন্ড সিনড্রোম।
৩। পেটেলার ডিসলোকেশন
৪।হিপ অথবা ফুট পেইন।

#আর্থ্রাইটিসজনিত হাটু ব্যথা- এর ভিতরে রয়েছে
১।অস্টিওআর্থ্রাইটিস- সবচেয়ে বেশি হাটু ব্যথা হবার কারন হিসেবে একে দেখা হয়।মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন পুরুষদের থেকে।
২।রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস
৩।গাউট
৪।সেপটিক আর্থ্রাইটিস।

#হাটুব্যথারধরননির্ণয়েরপরিক্ষনঃ

একজন অভিজ্ঞ ফিজিও খুব সহজেই রোগীর রোগ এর ইতিহাস, কিছু স্পেশাল টেষ্ট (অভিজ্ঞ ফিজিও করে থাকেন যেমন -মেকমারি টেস্ট, এন্টেরিয়র ড্রয়ার টেস্ট, পোষ্টেরিয়র ড্রয়ার টেস্ট, ভালগাস টেস্ট, ভেরাস টেস্ট ইত্যাদি) করে থাকেন।

এছাড়াও কিছু রেডিও ইমাজিং টেস্ট এবং কিছু প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করতে দেয়া হতে পারে বিশেষ প্রয়োজনে [বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে না]।

১। এক্স-রে
২।এম.আর.আই
৩।সিটি-স্ক্যান
৪।আর্থ্রোস্কোপি
৫।রেডিওনিউক্লেডয়েড বোনস্কেন।
৬।BMD টেষ্ট
৭। Rh Factor
৮।সেরাম ক্যালশিয়াম লেভেল

#হাঁটুব্যথার_চিকিৎসা-

সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারিত হয়। ১।যদি হাঁটু ফোলা থাকে, তাহলে ফোলা কমানো।
২। যদি হাঁটুর তাপমাত্রা বেশি থাকে, তাহলে বরফ
৩।তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে গরম সেক দেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও,,,,,,,,
১।মেডিসিন : সাধারণত ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ দেয়া হয়। তা ছাড়া ক্ষয় পূরণের জন্য কিছু ডায়টারি সাপ্লিমেন্টারি দেয়া হয়।

২।ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা -ব্যথা নিরাময় এবং জয়েন্টের স্বাভাবিক মুভমেন্ট ফিরিয়ে আনার জন্য ফিজিওথেরাপি একটি আধুনিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। এক্ষেত্রে হাটু ব্যথার ধরন অনুযায়ী একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্ট নিম্নোক্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।
১। মায়োফেসিয়াল রিলিজ টেকনিক।
২।DTF অথবা GTF ( বার্সাইটিস অথবা টেন্ডাইনিটস এর জন্য)
৩।স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ
৪।MWM(Movement with mobilization) টেকনিক
৫।মুভমেন্ট ইনহেনসিং এক্সারসাইজ
৬।মালিগান এর অন্যান্য এপ্রোচ
৭।আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ
৮। জয়েন্ট গ্যাপিং এন্ড ট্রাকশন
৯।এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ।

কিছু মেকানিকাল ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন –
১।কোল্ড কম্প্রেশন
২।আইস কমপ্রেশন
৩।আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি
৪।TENS
5।Wax থেরাপি
৬।।লেজার থেরাপি
৭। ইন্টার ফেরেনসিয়াল থেরাপি
৮।Gym ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি।
যা হাঁটুর শক্তি ও রেঞ্জ অব মুভমেন্ট বৃদ্ধি করে।

ইন্ট্রা আর্টিকুলার ইঞ্জেকশন : জয়েন্ট ফ্লুয়িড কমে গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ইন্ট্রা আর্টিকুলার ইঞ্জেকশন দিয়ে থাকেন।

সার্জারি : হাড়ের ক্ষয় মারাত্মক আকার ধারণ করে কিছু ক্ষেত্রে তখন জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করার প্রয়োজন হয়।

#প্রতিকার_প্রতিরোধঃ

কথায় আছে প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তম। সেজন্য কিছু নিয়ম – কানুন মেনে চলতে হয়।
রোগীকে নিম্নবর্নিত উপদেশ মানতে হয়। যেমন
১।ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা
২।শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৩।উঁচু কমোড বা পায়খানা ব্যবহার করা।
৪।পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেলস ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
৫।খেলাধুলার আগে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে।
৬। খেলোয়াড়দের হাঁটুর আশপাশের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
৭।নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যায়াম করা।
নিয়মিত হাঁটুন।

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁটুব্যথা নিরাময় সম্ভব।

#তাছাড়া ব্যথায় পড়লে নিম্নলিখিত নিয়ম-কানুন মানলে খুব সহজেই হাটু ব্যথা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব
১। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্ট এর নিয়ম অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
২। ব্যথা অবস্থায় হাঁটুকে বিশ্রাম দিতে হবে।
৩। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা যাবে না।
৪। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কম করতে হবে।
৫। ব্যথা অবস্থায় হাইকমোড ব্যবহার করতে হবে।
৬। ব্যথা অবস্থায় বসে নামাজ পড়তে হবে।
৭।বসা থেকে ওঠার সময় সাপোর্ট নিয়ে উঠতে হবে।
৮। হাঁটার সময় হাঁটুর সাপোর্ট হিসাবে- নি ক্যাপ, নি ব্রেস, ওয়াকিং এইড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
১০।ধূমপান ও এলকোহলমুক্ত জীবনযাপন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *